ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আমার স্বপ্ন র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী
আমি সত্যি অভিভূত, প্রীত। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মা, মাটি ও মানুষের ভালোবাসায় মুগ্ধ। মানুষের মমতা, স্নেহ ভালোবাসা আমাকে কাজে প্রতিশ্রুত করেছে। আমি নতুন এক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্বপ্ন দেখি। যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শান্তি সম্প্রীতি সমৃদ্ধ, উন্নয়ন এবং নিরাপদ হবে এবং সমস্ত দেশের জন্য হবে আদর্শ। তাই এ এলাকার মানুষের সুখ দুখের ভাগ নিতে চাই।
আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, এই ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহতি মানুষের জন্মভূমি। এই মাটিতে ব্যারিস্টার আব্দুর রসুলের জন্ম, ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁর মতো মহান ব্যক্তিত্ব, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের মতো গুণী মানুষেরা এই এলাকায় জন্মেছেন। আল্লামা তাজুল ইসলামের পবিত্র ভূমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। বরেণ্য মানুষেরা বেড়ে ওঠেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আলো-বাতাসে। সেই রত্নগর্ভা শহরের মানুষদের বন্ধু হতে পেরে আমি ধন্য, অভিভূত এবং এ জনপদের মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসায় কৃতজ্ঞ।
আমার স্মৃতির সবুজ এ্যালবামের অক্ষরচিত্রে আঁকা আছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাজনীতিতে প্রথম আসা দিনটির কথা। আমি সেদিন বলেছিলাম- আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চাই। শিক্ষা, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি, খেলাধুলা ও ধর্মীয় সম্প্রীতিসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ারকে উপমহাদেশের উদাহারণ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
খবরের কাগজ ও টেলিভিশনে নাকি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঝগড়া ফ্যাসাদ ছাড়া কিছু পাওয়া যায় না, এমন কথা মানুষজন বলে। সে অবস্থান থেকে আমরা যেন উত্তরণ ঘটাতে পারি সে জন্য চেষ্টা করছি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়ে আমার একটা স্বপ্ন আছে, একটা সাধ আছে। ওস্তাদ আলাউদ্দীন খা’র ব্রাহ্মণবাড়িয়া আবার ফিরে আসুক। শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের ব্রাহ্মণবাড়িয়া আবার ফিরে আসুক। আবার উল্লাস করের ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফিরে আসুক। আবার মনমোহন দত্তের ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফিরে আসুক। আবার ব্যারিস্টার আব্দুর রসুলের ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফিরে আসুক। আবার নবাব শামসুল হুদার ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফিরে আসুক। এটাই আমার স্বপ্ন-সাধ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ যেন সারা বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিতে পারে। যেমনি ভাবে বাংলাদেশের সমগ্র ছাত্রসমাজকে নেতৃত্ব দিয়েছিল আমাদের প্রিয় নেতা মরহুম আব্দুল কুদুস মাখন। তিনি আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছিল সামনের কাতারে। আজকে আমরা কেন পিছু হটছি। এটা বিবেচনা করেই আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাজনীতিতে এসেছি।
এখনও পর্যন্ত আমি সফলতা অর্জন করতে পারিনি। আমি এখনও অনেক পেছনে আছি। আমাদের অনেক পথ হেঁটে যেতে হবে। অনেক সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা যদি সকলে মিলে চেষ্টা করি, তাহলে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে আমরা চাঁদাবাজ মুক্ত করতে পারব। ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে আমরা ভূমিদস্যু মুক্ত করতে পারব। ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে আমরা সন্ত্রাসবাদের হাত থেকে মুক্ত করতে পারব। ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে আমরা টেন্ডারবাজদের হাত থেকে মুক্ত করতে পারব।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যারা আমাদের তরুণদের বিপথগামী করছে আমরা তাদের হাত থেকে মুক্ত করতে পারব। ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে আমরা মাদক মুক্ত করতে পারব। একটা সুশিক্ষিত জনশক্তি হিসাবে শুধু আমার নির্বাচনী এলাকা নয়, সমগ্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাঞ্চারামপুর, নবীগনগর, নাসিরনগর, সরাইল, আশুগঞ্জ, আখাউড়া, কসবা, বিজয়নগরসহ সমগ্র জেলাকে আমরা একটা অবস্থানে নিয়ে আসতে পারব।
আমাদের তিতাস শুকিয়ে যাচ্ছে। এটাকে আমাদের সগৌরবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আমরা সেই স্বপ্নকে সামনে রেখেই এগোচ্ছি। আজকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর ছোট হয়ে যাচ্ছে। এ শহর আমাদের নাগরিকদের ধারণ করতে পারছে না। এ শহরের বিস্তৃতি ঘটানো দরকার। এ শহরকে সম্প্রসারণ করা দরকার। সেই জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। জননেত্রী শেখ হাসিনার কল্যাণে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। আরও এগিয়ে যাব ইনশাল্লাহ।
রাজনীতিতে আমি এসেছিলাম শহিদ শেখ কামালের হাত ধরে। বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য একজন ছাত্রকর্মী হিসাবে এবং পরবর্তীতে আমলা হিসাবে যখন কাজ করি তখন জননেত্রী শেখ হাসিনার স্নেহ, মমতা, ভালোবাসা নিয়ে আমি আজ এ পর্যন্ত আসার সুযোগ পেয়েছি।
আর পেয়েছি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহকর্মী বন্ধুদের সহযোগিতা। তাঁরা অকুণ্ঠভাবে আমাকে সহযোগিতা করেছে। শর্তহীনভাবে আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আপামর জনসাধারণ আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। আপনাদের কথা আমি কখনো ভুলব না।
অগণন মানুষের আদর-ভালোবাসা আমি কোথায় রাখব? আমার তো একটা ছোট্ট হৃদয়। এ ছোট্ট হৃদয়ে আপনাদের ভালোবাসা আমি পরিপূর্ণ করে রাখতে চাই। আমি শুধু দোয়া চাই, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে, সবাই প্রার্থনা করবেন, যেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মানুষের খেদমত করতে পারি। আমি আমার একটা কথা বিশ্বাস করার জন্য আপনাদের অনুরোধ করব। আমি কখনো রাজনীতিতে মিথ্যা কথা বলি না, আমি রাজনীতিতে মিথ্যা আশ্বাসও কখনো দিই না। আমি সুন্দর ব্রাহ্মণবাড়িয়া গড়ে তোলার জন্য যে সংগ্রামে হাত দিয়েছি, আমি জানি আপনারা আমাদের পাশে আছেন। তবে একটা কথা আপনাদের বলতে চাই- রাজনৈতিক দিক থেকে, সাংগঠনিক দিক থেকে, উন্নয়নের দিক থেকে, আমার ভেতরে কারও প্রতি কোনো বিদ্বেষ নেই। সকলের প্রতিই আমার ভালোবাসা আছে। আমি সকল মানুষকে, এমনকি যারা আমার প্রতি নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে থাকেন, তাদের প্রতিও আমার কোনো বিদ্বেষ নেই। আমাদের রাজনৈতিক দর্শন, আমরা একটা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে চাই। আমরা একটি ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ গড়তে চাই। আমরা একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে চাই। এর আগে আমরা আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে সুসংগঠিত করতে চাই। এ ব্যাপারে যারাই আমাকে সহযোগিতা করবেন তাদের কারও প্রতি আমার কোন বিদ্বেষ নেই।
জোরগলায় আল্লাহ রাব্দুল আলামিনকে স্বাক্ষী রেখে বলতে পারব- আমি পুরনো একটি কথা বলি, জনেনেত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে আমি ছোট্ট একটি চাকরি করতাম। আমি তাঁর একান্ত সচিব ছিলাম। এখন শুনি সেটি নাকি অনেক বড় পদ ছিল। আমি বুঝতে পারিনি। তো তিনি আমাকে একদিন বলেছিলেন- তুমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জন্য এতকিছু করছ, বিনিময়ে তুমি কি চাও? তিনিই বললেন- বিনিময়ে কিন্তু তুমি তোমার জন্য কিছু চাইতে পারবে না। তুমি ভোট চাইতে পারবা না। তখন আমি ওনাকে একটা কথা বলেছিলাম- দুটি জিনিস আমি নিশ্চয় বিনমিয়ে চাইব। বিনা বিনিময়ে আমি কোনো কাজ করতে চাই না। তিনি বলেছিলেন- সেটা কী? আমি বলেছিলাম- আপনার জন্য দোয়া চাইব এবং আমার নিজের জন্য দোয়া চাইব। আপনারা আমার নেত্রীর জন্য, জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করবেন। তিনি যেন কর্মক্ষম থাকেন, তিনি যেন সুস্বাস্থ্যের অধিকারিণী থাকেন এবং বাংলাদেশকে তিনি যেভাবে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন, উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, সে পথে যেন তিনি দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে পারেন। এ জন্য আপনারা দোয়া করবেন আল্লাহর দরবারে দুহাত তুলে। আল্লাহর দরবারে আপনারা প্রার্থনা করবেন, মসজিদে, মন্দিরে গির্জায় আপনারা প্রার্থনা করবেন। আল্লাহ্ যেন তাকে সুখ দেয়, শান্তি দেয়। এ দেশের মানুষকে তিনি যেন কষ্ট ভুলিয়ে দিতে পারেন।
আমাদের সকলের পিতা, আধ্যাত্মিক পিতা, রাজনৈতিক পিতা, আদর্শের পিতা, এ রাষ্ট্রের পিতা, জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখেছিলেন বাঙালিদের একটি রাষ্ট্র উপহার দিতে, সেটা তিনি দিয়েছেন। আর তাঁর কন্যা তাঁর স্বপ্ন ধরে বাঙালিদের জন্য একটি সুখি সমৃদ্ধ দেশ উপহার দিতে চাচ্ছেন। আসুন আমরা সেই সংগ্রামে সকলে সমবেত হই। আমার আর কিছু বলার নাই। কি বলব? আপনাদের এ ভালােবাসা কি ভুলে যাব?
আমাদের নেত্রী, আমাদের ষোল কোটি মানুষের নেত্রী দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন দেশের উন্নয়নের জন্য। শিক্ষার ক্ষেত্রে, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে, সর্বোপরি উন্নয়নের জন্য যা যা প্রয়োজন তা-করে যাচ্ছেন। আপনারা যারা এখানে আছেন, আমার মায়েরা,বোনেরা আপনারা জানেন আপনাদের অবস্থান এখন কোথায় আছে? আপনারা উপলব্ধি করতে পারেন। ১৯৯৬ সালে আপনাদের অবস্থান কোথায় ছিল আর আজকে আপনাদের অবস্থান কোথায়? এ বিশাল উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটাতে পেরেছেন এটা মাননীয় শেখ হাসিনার একক কৃতিত্ব। আমি মাঝে মাঝে ঠাট্টা করে নেত্রীকে বলতাম আপনি তো বাংলাদেশকে নারীস্থান বানিয়ে ফেলার চেষ্টা করছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনার আমলে প্রথম সুপ্রিমকোর্টে নারী বিচারপতি নিয়োগ হয়, তাঁর আমলে প্রথম জেলা প্রশাসক একজন নারী, প্রথম নারী পুলিশ সুপার, আমরা হয়ত দেখব আইজিপিও হয়ে গেছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনর আমলে প্রথম তিনি সেনাবাহিনীতি অফিসার পদে আমাদের মেয়েদের সুযোগ করে দিয়েছেন। আজকে নেভিতে আছে, ইয়ারফোর্সে আছে- কোথায় নেই মেয়েরা! সকল জায়গায় অগ্রগতি। আজকে দেখেন শিক্ষার ক্ষেত্রে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন, ৬০ শতাংশ মেয়ে স্কুল কলেজে অধ্যয়ন করছে। একদিন লোকেরা বলত যে, মেয়েরা ভোট দেয় না বলে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসতে পারে না। আর আজকে আমার বিশ্বাস আছে, মেয়েরা ভোট দেবে বলেই আওয়ামীলীগ আর ক্ষমতাচুত্য হবে না। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।